স্বদেশ ডেস্ক:
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুই কর্মকর্তা অভিনব কৌশলে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধামাচাপা পড়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে ‘কানাডা পালানো’ আনোয়ার হোসেনসহ দুই কর্মকর্তার নিখোঁজ থাকার তথ্য উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। একই সাথে গত বৃহস্পতিবার বিমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় ককপিট ক্রুসহ সব কর্মীকে যেকোনো কারণে বিদেশ ভ্রমণের আগে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাতের সাথে জিডি হওয়া প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে থাকায় কথা বলতে পারেননি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম গণমাধ্যমকে জানান, নতুন নির্দেশনা ঘোষণার আগে এতদিন বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের বিদেশ সফরের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা ছিল নিজ নিজ বিভাগের প্রধানদের হাতে। বৃহস্পতিবার জারি করা এক প্রশাসনিক আদেশে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সব কর্মচারীর জন্য কিছু শর্তও বেঁধে দেয়া হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ককপিট ক্রুসহ বিমানের সব কর্মচারী প্রতি দু’বছরে একবার নিজের উন্নত চিকিৎসার জন্য কিংবা পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সঙ্গী হিসেবে কিংবা ধর্মীয় কারণে দেশের বাইরে যেতে পারবেন। এছাড়া বছরে দুইবার নিকটাত্মীয়ের সাথে দেখা করতে কিংবা পর্যটন গন্তব্যে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভ্রমণের আগে বিমানের কর্মচারীদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক শাখায় আবেদন করতে হবে। তারপর দেশের বাইরে সফরের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিতে হবে। এরপর অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদনটি নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক বিভাগে পাঠানো হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুই কর্মকর্তা নিখোঁজ হওয়ার পর নতুন এমন নিয়মের ঘোষণা এসেছে। বিমানের নিখোঁজ দুই কর্মকর্তা হচ্ছেন, সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো: আনোয়ার হোসেন এবং বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদ। এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গত ৭ ডিসেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিজি-৩০৫ ফ্লাইটে কানাডা যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। আর সোহান আহমেদ গত ২৪ অক্টোবর থেকে কাজে আসছেন না।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে বদলি করে রাজশাহী বিমানবন্দরে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আনোয়ার হোসেন সেখানে যোগদান না করে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ছুটি নেন। পরবর্তীতে তিনি জেদ্দা যাওয়ার কথা বলে কানাডা পাড়ি জমান বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে।
আনোয়ার হোসেনসহ দুই কর্মকর্তার লাপাত্তার বিষয়টি বিমানবন্দর এলাকায় গুঞ্জন থাকলেও গত বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জানুয়ারি দুই নিখোঁজ কর্মকর্তার বিস্তারিত উল্লেখ করে বিমানের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ওই জিডিতে বলা হয়েছে, আনোয়ার হোসেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কানাডায় পালিয়ে গেছেন। এতে বিমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট খিজির ও জিয়া নামের দুই কর্মকর্তা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কানাডা পাড়ি জমান। দুই বছর আগে তারা কানাডা যান। যাওয়ার পর তাদের পরিবারকেও তারা নিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাদের প্রথমে শোকজ ও পরে চাকরিচ্যুত করা হয়। তার আগেই তারা বিমান ম্যানেজমেন্টকে লিখিত জানিয়ে দেন, তারা আর বিমানে ফিরবেন না।
খিজির ও জিয়ার কানাডা পালানো ও তাদের চাকরিচ্যুতির সত্যতা জানতে গতকাল রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম এর বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।